বান্দরবানে বম সম্প্রদায়ের জন্য সেনাবাহিনীর নিরলস প্রচেষ্ঠা, শিক্ষা ও খাদ্য সহায়তায় নতুন দিগন্তের সূচনা

0 56

স্থানীয় প্রতিনিধি:

 

প্রাকৃতিক নৈসর্গ, জনবৈচিত্র ও বৈচিত্রময় সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ আমাদের এই সম্প্রীতির বান্দরবান। বান্দরবান পার্বত্য জেলার পাহাড়ী দূর্গম এলাকা হলেও প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ এবং পর্যটন শিল্প বিকাশের অপার সম্ভাবনা থাকায় এটি বাংলাদশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা। সদর দপ্তর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড ও বান্দরবান রিজিয়ন শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন বজায় রাখার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

 

১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অন্তর্গত রুমা ও থানচি উপজেলার বাকলাই পাড়া সাবজোনের দূর্গম পাহাড়ি এলাকার জনগণ সাধারণত প্রকৃতির উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করে থাকে। আধুনিক শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সামাজিক সুবিধা হতে বঞ্চিত এই এলাকার সাধারণ জনগণের যে কোন দূর্যোগ মোকাবেলায় বন্ধু হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঁচ দশকের বেশি সময় যাবত পাশে রয়েছে। এ জেলায় বিভিন্ন জাতি, বর্ণ এবং ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। বম জাতি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গোষ্ঠী।

 

আজ, ০৬ মার্চ ২০২৫ তারিখে বাকলাইপাড়া সাবজোনের বিভিন্ন পাড়া এবং স্থানীয় জনগণের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আলোচনা এবং মতবিনিময়ের নিমিত্তে সাবজোনের অন্তর্গত সকল বম পাড়ার কারবারি এবং পাড়ার সদস্যদের সহিত বাকলাই পাড়ায় মতবিনিময় সম্মেলন-২০২৫ পরিচালিত হয়।

 

সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেঃ কর্নেল জুলকার নাঈন, বিএসপি, পিএসসি, অধিনায়ক দি ম্যাজিস্ট্রেট টাইগারস্। এছাড়াও বাকলাই পাড়া সাবজোনের অন্তর্গত বম পাড়ার কারবারিবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ধর্মযাজক, শিক্ষক ও পাড়ার সদস্যগণসহ সর্বমোট ৭৭ জন মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।

 

এ সময় ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অধিনায়ক বলেন,পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, পাড়া এবং স্থানীয় জনগণের জীবন যাত্রার মান এবং সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই, পাড়ার সন্তান এবং যুবসমাজ এর মান সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য সকল প্রকার প্রয়োজনে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পাশে থাকবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। পাড়ার যে সকল সদস্য পাড়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন তাদের নিজ ঘরে ফিরে এসে নির্ভয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য সকল প্রকার সহায়তা সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রদান করা হবে।এছাড়াও তিনি যুব সমাজ এর বিকাশ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সন্ত্রাসবাদ নিরসনে বম জনগোষ্ঠীদের ভুমিকা, এলাকায় চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পদক্ষেপ, পর্যটকদের আগমন এবং টুরিস্ট গাইড হিসাবে ব্যবহার, দায়িত্বপূর্ণ এলাকার এনজিও সংস্থা সমূহের কার্যক্রম এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান সহায়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন।

 

 

উক্ত বিনিময়ে সভায় বাকলাইপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জয়রাম বম বলেন, ” আমরা নিজ ঘরে ফিরতে পেরে সেনাবাহিনীর প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। দীর্ঘদিন পাড়ায় না থাকায় জুম চাষ সঠিকভাবে হয়নি। এজন্য আমাদের খাদ্য সামগ্রীর সাহায্য দরকার, যা আমরা বর্তমানে বাকলাই পাড়া আর্মি ক্যাম্প থেকে পাচ্ছি। সেনাবাহিনী আমাদের পাশে থাকলে বাকলাই পাড়াকে আগের মত করে গড়ে তুলতে পারব”।

 

প্রাতাপাড়ার কারবারি পাকত্লিং বম বলেন, “সেনাবাহিনীর সহায়তায় আমাদের পাড়ার অবস্থা বর্তমানে অনেক ভালো আমাদের অনুরোধ আমরা সেনাবাহিনীকে সব সময় এভাবে পাশে চাই”।

 

মতবিনিময় সভার একাংশে অধিনায়ক দি ম্যাজিস্ট্রিক টাইগারস্ কারবারীদের মাঝে সম্মাননা প্রদান করেন। এছাড়াও বাকলাইপাড়া সহ অন্যান্য বম সম্প্রদায়ের জনগনের মাঝে খাদ্য এবং পানির সমস্যা নিরসনে ৭৭ জনের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ (জনপ্রতি: ১০ কেজি চাল, ২ কেজি চিনি, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি লবণ এবং ২.৫ লিটার তৈল) এবং বাকলাই পাড়াতে একটি ওয়াটার রিজার্ভারের ভিত্তি প্রস্থর উদ্বোধন করেন।

 

অধিনায়ক ১৬ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও সকল ধরণের রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল জনসংখ্যার আপদকালীন সময় ছাড়াও ধর্মীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে সবসময় সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করে আসছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য এলাকার সাধারণ জনগণের মাঝে পাশে থেকে যে কোন প্রয়োজনে সর্বদা নিরলসভাবে কাজ করে যাবে বলে অধিনায়ক আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.