ডেস্ক রিপোর্টঃ
আগামীকাল ৯/৮/২০২৩ বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় তাদের আদিবাসী দাবী করে বিভিন্নভাবে দিবসটি পালন করবেন। কিন্তু বাংলাদেশে নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় আদিবাসী নয় মর্মে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।এ সব সম্প্রদায় এর কোন কিছু তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন উপজাতি নৃ-গোষ্ঠী তাদের আদিবাসী দাবী করছে। এর বিপরীতে দেশ প্রেম ও সাংবিধানিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ এর আদিবাসী দাবীর বিরোধিতা করে আজ খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের চেয়ারম্যান কাজী মুজিব রহমান বক্তব্য রাখেন এবং এর মূল প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন, তিনি বলেন-
আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন যে, আগামীকাল ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। এ দিনটি আসলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদিবাসীর মত এদেশের ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি জাতিসত্বা নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য ডামাডোল পিটিয়ে নিজেদের সরব উপস্থিতি জানান দেয় আর তথাকথিত গণমাধ্যমগুলো তা সরগরম করে প্রচার করে। আদিবাসী দিবসকে কেন্দ্র করে সুশীল, বুদ্ধিজীবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পত্রপত্রিকার সম্পাদকরা টিভির টকশো ও সভা-সেমিনারে সংবিধান বিরোধী আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করে এদেশের উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে এনজিও, দাতাসংস্থা, খ্রিস্টান মিশনারী ও পশ্চিমা দাতাসংস্থার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার পায়তারা করছে।
হঠাৎ কেন আদিবাসী শব্দ ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, এর যৌক্তিকতা কী এবং এর অন্তরালে কী আছে?
২০০৭ সালের জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের অনুচ্ছেদগুলো কেবল আদিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য। আর এমন লোভনীয় অনুচ্ছেদগুলোর সুবিধা নিতেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো নিজেদের আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারী ও বৈদেশিক কিছু এনজিও এবং মিশনারীদের খপ্পরে পড়েই আদিবাসী স্বীকৃতি দাবি করে। ১৯৯৭ সনে পার্বত্য চুক্তি করেছে উপজাতি হিসেবে। সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে উপজাতি কোটায়, দাবি করে নিজেদেরকে আদিবাসী! এমন দাবি হাস্যকর!
২০০৭ সালের জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য অনেকগুলো অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
১. ভূমি অধিকার,
২. আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার,
৩. স্বায়ত্তশাসন অধিকার,
৪. জাতীয়তা লাভের অধিকার,
৫. জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ।
আদিবাসী আইনের মধ্যে দিয়ে দেশকে বিছিন্নতাবাদীদের স্বর্গ বানানোর পায়তারা। ২০০৭ সালের পর থেকে এই দাবীর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের কুচক্রী মহল একাট্টা!
(আদিবাসী অধ্যুষিত) এলাকায় যে সব সুবিধা পাবে তারা..
১. তাদের থাকবে নিজস্ব আইন পরিষদ।
২. তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্র কোন আইন করতে পারবে না।
৩. তারা চাইলে নিজস্ব সরকার গঠন করতে পারবে।
৪. যে কোন বিদেশি রাষ্ট্র তাদের কারিগরি সহায়তা দিতে পারবে।
৫. বাংলাদেশের প্রচলিত ভূমি আইন তারা মানতে বাধ্য নয়।
৬. তাদের অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্র সেখানে কোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে না।
৭. সেখানের প্রাকৃতিক সম্পদ রাষ্ট্র নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে না।
৮. দেশের কোন নাগরিক সেখানে জমি ক্রয় করতে পারবে না!
উক্ত আইন সমূহ যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা আদিবাসী হিসেবে স্বিকৃতি লাভের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ এক দশমাংশ হারাবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতা খর্ব হবে, সার্বভৌমত্ব হারাবে বাংলাদেশ। উপজাতি কুচক্রি মহলের স্বপ্নের জুম্মলেন্ড বাস্তবায়ন তরান্বিত হবে।
উক্ত সুবিধা গুলো নেওয়ার জন্য এবং জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে জাতীয়তা লাভের জন্য মূলত তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার লড়াইটা প্রাথমিক ভাবে বলা যায়।
আসলে উপজাতি জাতিস্বত্বা আদিবাসী হওয়ার দাবি রাখে কী?
ব্রাজিলের আমাজনের আদিবাসী এবং অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীর মতো কি ‘জীবনধারা, ভাষা, সংস্কৃতি ঐতিহ্য’ আছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতি জনগোষ্ঠীর? যদি না থাকে তাহলে কিভাবে তারা নিজেদের আদিবাসী দাবি করে। বাংলাদেশের চেয়ে অধিক উপজাতি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে ভারত, মায়ানমার ও চীনে। তারা কি উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে? নিঃসন্দেহে তারা উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি৷ সুতরাং বাংলাদেশে আদিবাসী স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। জাতিসংঘ বাংলাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠী আছে কিনা তা জানতে চেয়ে ২০০৭ সালে বাংলাদেশের কাছে চিঠি দেন। চিঠির জবাবে ২০০৭ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাস্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে আদিবাসী নেই বলে ব্রিফিং করে জানায়। এছাড়াও বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নাই, আদিবাসী থাকলে আমি বাংলাদেশের আদিবাসী।
উপজাতি ইতিহাসবিদরা অকপটে তা স্বীকার করে উপজাতীয়দের এদেশে বসবাসের ইতিহাস ৩ শত বছরের বেশি নয়। তারা পার্শ্ববর্তী দেশগুলো হইতে ১৭০০ সাল নাগাদ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করে। এই শরণার্থীরা কিভাবে আদিবাসী হয় এবং আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি তোলে? বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙ্গালী এদেশে হাজার বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছে। বাঙ্গালীরাই এদেশের ভূমিপুত্র। জাতিসংঘের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যে, সংজ্ঞা রয়েছে সে সংজ্ঞা অনুসারে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জাতিস্বত্বা কোনভাবেই আদিবাসী হওয়ার দাবি রাখেনা। ILO Convention এর সাধারণ নীতির ১ এর যে ২টি আইন আছে সেই আইনের আংশিক আমাদের দেশের উপজাতিরা তুলে ধরে। সম্পূর্ণ তুলে ধরেনা। তা কৌশলে এড়িয়ে যায়। দুইটি আইনে উপজাতি ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংজ্ঞা নির্ধারণ বিষয়ক। মূলত, আন্তর্জাতিক আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর জাতিস্বত্বার একটি অংশ আজ নিজেদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবি তুলছে এবং তাদের এই দাবির পেছনে কলকাঠি নাড়াচ্ছে বর্ণিত মহল।
আদিবাসী শব্দ ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সরকার তার অবস্থান বারংবার তুলে ধরেছে এবং গত ২০২২ সালের ১৯ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে-
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শেখ শামছুর রহমান স্বাক্ষরিত স্মারক নং-১৫.০০.০০০০.০২৪.১৮.১৪.৫৯৬ মূলে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার না করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় এতে।
প্রজ্ঞাপনে সংবিধান সম্মত শব্দ ব্যবহারের নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে প্রচারের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছে।
সংবিধান কী বলে?
২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ২৩(ক) ধারায় সংস্কৃতি সংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদ সংযোজন করে বলা হয়, “রাষ্ট্র বিভিন্ন উপ-জাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
দুঃখজনক যে, প্রজ্ঞাপন ও সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছে, বাংলাদেশর তথাকথিত আদিবাসী ফোরাম এবং তথাকথিত গণমাধ্যম! তারা হরহামেশাই আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করে রাষ্ট্রের সঙ্গে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে আসছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা প্রশাসন ও সরকারের নিকট দাবি জানাই সংবিধান পরিপন্থী আদিবাসী শব্দ বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমরা জানতে পেরেছি- আগামীকাল ৯ আগস্ট ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সকাল ১০ ঘটিকায় রাজধানীর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে সমাবেশ, র্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
উক্ত অনুষ্ঠানে উদ্বোধক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধান অতিথি, রাশেদ খান মেনন, সভাপতি বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন উপজাতি হিসেবে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী উপমন্ত্রী পদমর্যাদা ভোগকারী এবং ৩৬ হাজার বাঙ্গালী খুনি সন্তু লারমা। এছাড়াও রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় প্রশাসনের নাগালে দিবসটি পালিত হবে।
আগামীকাল ৯ আগস্ট সংবিধান পরিপন্থী, বিতর্কিত স্পর্শকাতর আদিবাসী দিবস পালনের নামে দেশবিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের ব্যনারে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের অঙ্গ সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির উদ্যোগেও মানববন্ধন করা হবে।
প্রশাসন ও সরকারের নিকট আমাদের বার্তা হচ্ছে- আদিবাসী শব্দটি স্পর্শকাতর এবং সংবিধান পরিপন্থী; দেশপ্রেমিক জনতা হিসেবে এই শব্দ বন্ধে এবং দিবসটি পালনের উপর সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ কামনা করছি।
আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে সংবাদ সম্মেলন সমাপ্তি ঘোষণা করা হইলো.
এ-সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পিসিএনপি’র মহাসচিব মোঃ আলমগীর কবির, কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুল মজিদ, খাগড়াছড়ি জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব মোঃ এস এম মাসুম রানা, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মোঃ লোকমান হোসাইন, ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসাদ উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাহাদাত হোসেন কায়েস, খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি সুমন আহমেদ, মহিলা পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি হাসিনা আকতার, সাধারণ সম্পাদক জোহরা আক্তার প্রমুখ।
এ-সময় খাগড়াছড়ি জেলার সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও একই বিষয়ে রাংগামাটির বনরুপায় জেলা ছাত্র পরিষদ, জেলা সভাপতি হাবিব আজমের নেতৃত্বে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
নিবেদনে
কাজী মো: মুজিবর রহমান
চেয়ারম্যান
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।