পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে ২১ মার্চ

0 405

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে নির্মিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ২১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীর এসে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে চলছে সার্বিক প্রস্তুতি। তাঁকে বরণ করতে বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে ২০০ নৌকা। এসব নৌকা রংবেরঙে সাজানোর কাজ প্রায় শেষ। রঙিন পাল তুলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশের রামনাবাদ নদীতে ভেসে ভেসে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন এ অঞ্চলের জেলেরা।

প্রধানমন্ত্রীর কলাপাড়ায় আগমনকে কেন্দ্র করে দিন-রাত চলছে প্রস্তুতি। পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রশাসন সূত্র জানায়, কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরের আন্ধারমানিক নদীর মোহনায় এসব নৌকা সাজানোর কাজ চলছে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে। চারুকলার একটি দল এসব নৌকায় রংবেরঙের নকশা করছে। তাদের সহযোগিতা করছেন স্থানীয় জেলেরা।

কুয়াকাটা মৎস্যজীবী সংগঠন আশার আলো সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলাপাড়ায় আসছেন, এটা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অনেক বড় আশার খবর। স্বাগত জানাতে ২০০ নৌকা দিয়ে তাঁকে বরণ করতে তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে মিশে আছে নদী-সাগর-নৌকা। এটা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের জীবন-জীবিকার সেই বাহন দিয়েই আমরা স্বাগত জানাতে চাই। এ জন্য ২০০ নৌকা বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হচ্ছে।’

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

পটুয়াখালীর পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আবদুল মাওলা বলেন, ২০২০ সালের ১৫ মে থেকে পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে দুটি ইউনিটে মোট ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা লাভ করে। তবে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ায় এখন একটি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ জাতীয় গ্রিডে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পুরোটাই সরবরাহ করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী ২১ মার্চ এই প্রকল্প উদ্বোধনের সম্মতি দিয়েছেন।

Payra Thermal Power Plant

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) মালিকানায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ‘পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র’ নামে তৈরি হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম অংশে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশে আরও ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হবে বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। এতে জাতীয় গ্রিডে পায়রা থেকে মোট ২ হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী এলাকায় ৯৮২ দশমিক ৭৭ একর জমির ওপর বিসিপিসিএল নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০ পরিবারের জন্য নির্মিত আবাসন প্রকল্প ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ উদ্বোধন করেছিলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে বাড়ির চাবি হস্তান্তর করেন। তারও আগে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তা পরিকল্পনা কোভিড প্রটোকলকে গুরুত্ব দিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে। সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চলছে। এরই মধ্যে সাদাপোশাকের নিরাপত্তা বাহিনীসহ চার স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনী মাঠে কাজ করছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.