**ডেস্ক রিপোর্টঃ**
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী শহীদ ওমর ফারুককে আজকের এই দিনে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের সামনে থেকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর সন্ত্রাসীরা। এক সময় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ওমর ফারুক যখন পরিবারসহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তখন হয়তো তিনি বুঝতে পারেননি তাঁর এই ধর্মীয় সিদ্ধান্ত তাঁকে জীবন দিয়ে মূল্য চুকাতে হবে। মসজিদের মতো একটি পবিত্র ও ধর্মীয় স্থানেও যে তিনি নিরাপদ ছিলেন না, সেই বাস্তবতা আজ কাঁদাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড কোনো সাধারণ হত্যার ঘটনা নয়—এটি একটি নিরপরাধ নাগরিককে কেবলমাত্র তার ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে হত্যা করার চরম দৃষ্টান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সশস্ত্র আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ ও নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় এবার ধর্মান্তরিত মুসলিমদের ওপর আঘাত হানা হলো। জেএসএস তাদের স্বঘোষিত “জাতীয়তাবাদী” উদ্দেশ্যের আড়ালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি জাতিগত এবং ধর্মীয়ভাবে একচেটিয়া এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে চায়—যেখানে ভিন্নমত, ভিন্নধর্ম, এমনকি নিজ সম্প্রদায়ের ভিন্ন সিদ্ধান্তও সহ্য করা হয় না। এই চরম সহিংস মনোভাব এবং সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা শান্তি প্রক্রিয়া ও পার্বত্য অঞ্চলের সামাজিক সহাবস্থানকে চরমভাবে বিপন্ন করছে। ধর্মান্তরিত মুসলিমদের বিরুদ্ধে এমন বর্বর আক্রমণ বাংলাদেশের সংবিধান, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের উপর সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। রাষ্ট্র যেখানে প্রত্যেক নাগরিককে তার বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে, সেখানে একজন নাগরিক কেবল ধর্ম পরিবর্তন করার অপরাধে প্রাণ হারাবে—এ ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। স্থানীয় মুসলিম জনগোষ্ঠী, ইসলামি সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা এবং সচেতন নাগরিক সমাজ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানিয়েছে, যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। ওমর ফারুকের এই রক্তপাত যেন আরেকটি ‘নতুন কল্পনা’ বা ‘আরেকটি নিস্তব্ধ বিচারহীনতা’য় রূপ না নেয়, সে বিষয়ে সকল মহলকে এখনই সতর্ক হতে হবে। তার মৃত্যু শুধু একটি প্রাণহানি নয়—বরং এটি পাহাড়ে ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতার ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক নির্মম ফতোয়া। তাই এখনই প্রয়োজন রাষ্ট্রের সাহসী এবং কার্যকর পদক্ষেপ, প্রয়োজন সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহাড়ে সক্রিয় ও সুনির্দিষ্ট উপস্থিতি, যাতে ভবিষ্যতে কোনো ধর্মান্তরিত ব্যক্তি বা ভিন্নমতাবলম্বী নাগরিক এভাবে হামলার শিকার না হয়। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড আজ প্রশ্ন তুলেছে—পার্বত্য চট্টগ্রামে কি সত্যি ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে? ধর্মান্তরিত মুসলমানদের কী রাষ্ট্র সুরক্ষা দিতে পারবে? পাহাড়ে ওমর ফারুকের মতো আরও অনেকেই আছেন, যারা আজ জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। এই ঘটনার দায় শুধু জেএসএস-এর নয়, বরং রাষ্ট্র যদি এখনই জোরালো পদক্ষেপ না নেয়, তবে সেই দায় রাষ্ট্রকেও নিতে হবে। শহীদ ওমর ফারুকের রক্ত যেন বৃথা না যায়—এটাই হতে হবে আমাদের জাতিগত অঙ্গীকার।