শিক্ষক সোহেল রানা হত্যা নিয়ে জ্যোতিছরা ভান্তের মিথ্যাচার

0 9,323

মুক্ত কলামঃ

 

“শিক্ষক সোহেল রানা হত্যা নিয়ে জ্যোতিছরা ভান্তের মিথ্যাচার”

সম্প্রতি জ্যোতিছরা ভান্তে নামক এক বৌদ্ধ ভিক্ষু উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুলের ইন্সট্রাক্টর (বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স) ও বিভাগীয় প্রধান আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা কে নিয়ে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে চরম মিথ্যাচার এবং নিয়মিত দেশদ্রোহী ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক নির্মমভাবে হত্যার শিকার শিক্ষক সোহেল রানাকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর পাশাপাশি পাহাড়ে শান্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে আদিবাসী স্বীকৃতি, বাঙ্গালিদের উচ্ছেদ, সেনাবাহিনীদের পার্বত্য অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়ার মতো বিভিন্ন উস্কানীমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে আরও উসকে দিতে এবং শিক্ষক সোহেল রানা হত্যার আসামিদের নির্দোষ প্রমাণ করতে সন্ত্রাসীদের পক্ষে নিয়মিত সাফাই গাচ্ছেন। এই জ্যোতিছরা ভান্তে সন্ত্রাসীদের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসককে শিক্ষক সোহেল রানা হত্যার দায়ভার বহন করে পদত্যাগের দাবিও জানান। তার ভাষ্য মতে সোহেল রানা স্যারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা উপজাতি সন্ত্রাসীরাও জাতিগতভাবে চরম ভদ্র, নম্র ও মৈত্রীর আদর্শে বিশ্বাসী।

 

তিনি বললেন, অধিকসংখ্যক জনতা একত্রিত হলে অশৃঙ্খল বা উত্তেজিত হতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। তবে উত্তেজিত হয়ে নিরপরাধ একজন শিক্ষক কে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যার বিষয়টি তিনি পাশ কাটিয়ে গেলেন। অর্থাৎ তার আদর্শ মতে বহু সংখ্যক জনতা একত্রিত হয়ে নিরপরাধ কাউকে হত্যা করা বৈধ। এটা তার কেমন মৈত্রী আদর্শ তা তার বিবেকের আদালতে প্রশ্ন থেকেই যায়। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে বলেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্টে নাকি ঐ উপজাতি মেয়েকে শিক্ষক সোহেল রানা কর্তৃক ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে। তথাকথিত মৈত্রীর আদর্শে বিশ্বাসী এই ভান্তে মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প বলতে গিয়ে হয়তো ভুলেই গেছেন কোন জীবিত মানুষকে পোস্টমর্টেম করা হয় না। বানোয়াট গল্পে তিনি ফরেনসিক রিপোর্টের কথাও বলতে পারতেন। কথায় আছে না ‘মিথ্যা গল্পে নিজের অজান্তেই প্রকাশিত কিছু মিথ্যা থেকেই যায়’ যা এই মিথ্যাচারী ভান্তের বক্তব্যেও প্রমাণ মিললো। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো তথাকথিত ভিক্টিমের এজাতীয় কোন মেডিকেল টেস্টের প্রয়োজনও হয়নি। কারণ ঐ উপজাতি মেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের অসংখ্য সাক্ষাৎকারে বলেছে, শিক্ষক সোহেল রানা তাকে স্পর্শ বা তেমন কিছুই করেনি। তার অভিযোগ সোহেল রানা স্যার তাকে ডেকে এনে ধর্ষণ করতে চেয়েছিলো মাত্র।

 

যেহেতু তার বক্তব্যে ধর্ষিত হয়েছে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি তাই মেডিকেল টেস্টেরও প্রয়োজন হয়নি। শুধুমাত্র ধর্ষণ করতে চেয়েছিল এই অভিযোগ এনেই নির্মমভাবে পিটিয়ে শিক্ষক সোহেল রানা কে হত্যা করেছে পাহাড়ে বসবাসরত উপজাতি সন্ত্রাসীরা। এছাড়াও জ্যোতিছাড়া ভান্তের তথ্য মতে সোহেল রানা স্যার একজন পরিচিত ধর্ষক। তিনি যদি পরিচিত ধর্ষক হয়েই থাকেন তাহলে ঐ উপজাতি শিক্ষার্থী জেনে বুঝে কেন একজন ধর্ষকের নির্জন কক্ষে যাবেন? আর উপজাতি ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং তাদের পক্ষে সাফাই গাওয়া জ্যোতিছরা ভান্তেই শুধু তার সম্পর্কে জানেন? সোহেল রানা স্যার একজন পরিচিত ধর্ষক হলে তা কোনো বাঙালি সম্প্রদায়ের লোকেরা জানতেন না কেন? ঐ প্রতিষ্ঠানে উপজাতি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বাঙালি অসংখ্য শিক্ষার্থী থাকা সত্বেও তাদের অভিভাবকগণ কখনো এজাতীয় অভিযোগ করেনি কেন? হোক সে বাঙ্গালি কিংবা উপজাতি কোনো বাবা-ই তার সন্তানের ধর্ষক কে বিনা বিচারে ছেড়ে দিতেন না। অন্তত অভিযোগ হলেও করতেন। যেহেতু বাঙ্গালি সম্প্রদায়ের কোনো শিক্ষার্থী এজাতীয় অভিযোগ কখনো করেনি তার মানে এটা স্পষ্ট যে সোহেল রানা স্যারকে পরিকল্পিতভাবেই ধর্ষণের অভিযোগ এনে উপজাতি সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে।

 

এবার আসি জ্যাোতিছরা ভান্তের মৈত্রীর আদর্শের বিষয়ে। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, অহিংসা পরম ধর্ম। পৃথিবীর সকল প্রাণী শান্তিতে বসবাস করুক এটাই তিনি চান। ক্ষমা, দয়া এবং পরম সহিষ্ণুতাই তাদের মৈত্রী আদর্শ তথা বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা। তিনি এজাতীয় কথা বলে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উপজাতি সন্ত্রাসীদের নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মৈত্রির আদর্শে প্রতিষ্ঠিত বলে নিজেকেও পূতপবিত্র দাবি করছেন।

 

জ্যোতিছরা ভান্তের মতো বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মৈত্রীর আদর্শের সাথে বাস্তবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মীয় রাষ্ট্র মায়ানমারের কথা। ২০১৬ সালের সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা ছিলো মায়ানমারের রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনা। মায়ানমারের সরকার ১৩৫ টি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও রোহিঙ্গাদের দেয়নি। দেশটির সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০১৬ সালের অক্টোবরের শুরুর দিকে নতুন করে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার শুরু করে দেয়। মায়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের স্বীকার হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছিলো। নারী এবং শিশুদের উপর গণধর্ষণ এবং নির্বিচারে হত্যা ও গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনা সমগ্র বিশ্ববাসী দেখেছে। মায়ানমারের সেনাবাহিনীর এই রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশটির গণতন্ত্রকামী ও শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সুচি বলেছিলেন- এটা আইনসিদ্ধভাবেই নাকি করা হয়েছিল। বৌদ্ধ প্রধান দেশের একটি রাস্ট্র প্রধানের এই আচরণই বলে দেয় তারা কতটুকু মৈত্রীর আদর্শে বিশ্বাসী।

 

এদিকে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামেও মায়ানমারের মতো বৌদ্ধ ধর্মালম্বী রক্ত পিপাসু বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিভিন্ন দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র থেকে থেমে নেই। যার প্রমাণ পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে তাদের ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান বর্জন করা। নিরাপত্তাজনিত অজুহাতে ধর্মীয় উৎসব বর্জন করে অতঃপর নিরাপত্তা ও শান্তির কথা বলে পর্দার আড়ালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরিতে সহযোগিতা করাই হলো এই অঞ্চলে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রধান উদ্দেশ্য। যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ধর্মীয় উৎসব করতে কোনো প্রকার সাম্প্রদায়িক বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে না সেখানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভিক্ষুগণ বহির্বিশ্ব কে জাতিগত নিরাপত্তাহীনতার বার্তা দেওয়ার জন্যই যে তাদের ধর্মীয় উৎসব বর্জন করেছে তা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে।

 

সুতরাং জ্যোতিছরা ভান্তের মতো এজাতীয় ভিক্ষুরা প্রকাশ্যে বানোয়াট গল্প সাজিয়ে মিষ্টি কথার বুলি ফুটিয়ে পর্দার আড়ালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করেই আসছে। তাই দেশবাসীকে এই বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান করছি।

 

বিদ্যুৎ বড়ুয়া

পার্বত্য চট্টগ্রাম

Leave A Reply

Your email address will not be published.